সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৩:১৭ অপরাহ্ন

ঐতিহাসিক ৭ ডিসেম্বরই স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা!

ঐতিহাসিক ৭ ডিসেম্বরই স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা!

সুকুমার সরকার : বাংলাদেশের ৯ মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষলগ্নে ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর একটি ঐতিহাসিক দিন। আগেই ভারতীয় সেনা এবং বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত ‘মিত্রবাহিনী’র যৌথ আক্রমণে কাবু হয়েছিল পাকিস্তানের দখলদার বাহিনী। আর সাত ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা পাকিস্তানি হানাদারদের থেকে মুক্ত হয়। এই দিনেই পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে মিত্রবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা শেরপুর অঞ্চলকে শত্রুমুক্ত করেন।

মিত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জগজিৎ সিং অরোরা হেলিকপ্টার করে আসেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার শেরপুরে। তারপর স্থানীয় শহিদ দারোগ আলি পৌর পার্ক মাঠে এক সংবর্ধনা সভায় শেরপুরকে মুক্ত বলে ঘোষণা করেন। তারপর সেখানেই প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এখানে দাঁড়িয়েই তিনি বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, মস্কো ও আকাশবাণী-সহ বিভিন্ন বেতার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আগামী ৭ দিনের মধ্যে ঢাকা মুক্ত করার আশাপ্রকাশ করেছিলেন। সেই কথা সত্যি করে ঢাকা মুক্ত হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর। সেসময় মিত্রবাহিনীর প্রধানকে শেরপুরের বিশিষ্ট নাগরিক মহম্মদ আলি মিঞা, ডাক্তার জামান, খন্দকার মজিবুর রহমান, মোজাম্মেল হক ও পণ্ডিত ফসিহুর রহমান প্রমুখ সংবর্ধনা দেন।

স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসে বর্তমান শেরপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ৩০ থেকে ৪০টি খণ্ডযুদ্ধ হয়। এতে শহিদ হন ৫৯ জন মুক্তিযোদ্ধা। পাক হানাদার বাহিনীর নির্মমতার শিকার হয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে ১৮৭ জন, শেরপুর সদর উপজেলার সূর্যদী গ্রামে ৫২ জন ও ঝিনাইগাতী উপজেলার জগৎপুর গ্রামে ২০ জন মুক্তিকামী মানুষের মৃত্যু হয়। ৪ ডিসেম্বর কামালপুরের ১১ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রমাগত আক্রমণ ও গুলি বর্ষণের মুখে স্থানীয় পাকসেনারা পিছু হটে। আর ৫ ডিসেম্বর থেকে তল্পিতল্পা বেঁধে কামালপুর-বক্সিগঞ্জ থেকে শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলা ও শেরপুর শহর হয়ে জামালপুর অভিমুখে রওনা হয়। আর ৬ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে শেরপুর শহরের উপর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে জামালপুর পিটিআই ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় শেরপুর।

তবে স্বাধীনতা যুদ্ধের সুতিকাগার বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাজধানী চুয়াডাঙা। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে চুয়াডাঙা শত্রুমুক্ত করেন বাংলার মুক্তিসেনারা। ৭ ডিসেম্বর ভোরেই মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী মাগুরা শহরে প্রবেশ করে পাকবাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্প ও গোলাবারুদ দখল করে নেয়। প্রাণ ভয়ে পাকবাহিনী মাগুরা জেলা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী কামারখালী হয়ে ফরিদপুরের দিকে চলে যায়। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর গাইবান্ধাবাসী পায় মুক্তির স্বাদ। ৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয় গাইবান্ধার ফুলছড়ি থানা। ৬ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হয় সুন্দরগঞ্জ। একে একে মুক্ত হয় সাদুল্যাপুর, সাঘাটা ও পলাশবাড়ি থানা। ১৯৭১ এর এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রিমুখী আক্রমণের মুখে দখলদার পাকবাহিনী সাতক্ষীরা জেলা ছাড়তে বাধ্য হয়। ওই দিন বীরের বেশে এই মাটির সন্তানরা বাংলাদেশের অর্জিত লাল সবুজের পতাকা কাঁধে নিযে স্বগৌরবে সাতক্ষীরায় বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। ১৯৭১ সালের এইদিনেই শত্রুমুক্ত হয় নোয়াখালি জেলা। মুক্তিসেনারা একাত্তর সালের এইদিন জেলা শহর মাইজদীতে রাজাকারদের প্রধান ঘাঁটির পতন ঘটিয়ে নোয়াখালির মাটিতে উড়িয়ে ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় পতাকা।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877